১৯৮০ সালের ১৮ই মে কেবলমাত্র দক্ষিণ কোরিয়া নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে এক ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। গোটা কোরীয় সমাজ সামরিক অভ্যুত্থানর বিরুগ্ধে জেগে উঠেছিলো সেদিন। অনেক দিন যাবত জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রুঁখে দাঁড়িয়ে ছিলো সশস্ত্র ব্যাটালিয়নগুলোর নগরীতে প্রবেশ ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ করতে। সংহতির সে এক অভূতপূর্ব মুহুর্ত!
কয়েকদিন পরে, সশস্ত্র ব্যাটালিয়নগুলো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নগরীতে প্রবেশ করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করেছিলো তাদেরই জনগণের রক্ত ঝরিয়ে। নিজ ভুমিতে সামরিকতন্ত্রকে পরাজিত করার ও গণতন্ত্রকে পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রায় ১৬০ জন মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গের পথ বেছে নিয়েছিলো সমগ্র জাতিকে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলার জন্য। তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য সম্মানীত হয়েছিলো। জনগণ যুগপতভাবে সংগ্রামের মাধ্যমে সামরিক শাসনকে পরাজিত করার সাফল্য অর্জন করেছিলো। দক্ষিণ কোরিয়া আজ এক স্পন্দিত গণতন্ত্র। দুই সামরিক নেতা – চুন ডু-হওয়ান এবং রোহ টাএ-উও – বিচারের মুখোমুখী হয়ে দণ্ডিত হয়েছিলো।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা প্রকারের কর্তৃতবাদ ও সামরিকতন্ত্র পুরোভাগে এসেছে। এমনকি বেশিরভাগ বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন বৃত্তের মাঝেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অজুহাতে সামরিকতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের পক্ষে যুক্ত-তর্ক অপরিহারযোগ্য। অনেক দেশের সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতারোহন করলেও বহুাবিধ বিশেষায়িত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা সরকার ব্যবস্থাপনাকে প্রকারান্তরে কর্তৃত্ববাদে রূপান্তরিত করে। অনেক সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যারা কর্তৃত্ববাদ ও সামরিকতন্ত্রের অপরিহার্য্যতার পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তাদের জরুরীভাবে এই বিষয়টির সুরাহা করা দরকার। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সরকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ কখনোই কর্তৃত্ববাদের ক্রীড়নকে পরিণত হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, এটা বহু দেশেই একটা উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে ঘটে চলেছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে বাস্তচ্যুত করার প্রক্রিয়ার বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ এখন্ গড়ে ওঠেনি। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষ নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গ, ও ক্ষমতাহীন মনে করে। উৎপাদিত গণসমর্থন সত্যিকার অংশগ্রহনের সম্ভাবনাকে স্থানচ্যুত করেছে। সর্বত্রই মানুষ এই সমস্যার সমাধান তালাশ করছে।
জনগণের সত্যিকার অংশগ্রহন ব্যতীত জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সরকার ব্যবস্থাপনা অতি সামান্যই অর্জন করতে সক্ষম। গোয়াংজু গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতির এক্ষত্রে রয়েছে ব্যপক বৈশ্বিক গুরুত্ব। ‘গুড গভর্ন্যান্স’ বা ‘সুশাসন’ – এর ধারণা নিশ্চিতভাবেই সামরিকতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিহত করার সাথে অতোপ্রতভাবে সংযুক্ত হতে হবে।
সত্যিকার গণপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা – যার মাধ্যমে মানুষ শাসন ব্যবস্থায় তাদের প্রকৃত অংশগ্রহনের প্রক্রিয়া ফিরে পায় – তার প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় ‘সার্বজনীন সামরিকতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ১৮ই মে’র স্বীকৃতি হবে একটি প্রতিকী বৈশ্বিক স্বীকৃতি। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সকল প্রবক্তাকে ‘সামরিকতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধে সার্বজনীন দিবস’ সংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্রকে সমর্থনের উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিবৃতিটি মূল ইংরেজী সংস্করণ পড়তে দেখুন: English