২৬ জুন – নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস্ কমিশনের বিবৃতি
বাংলাদেশে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ দাবি করেছেন “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও অভাবনীয় সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে”। ১৪ জনু রাজশাহীর সারদায় পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে এক বক্তব্যে তিনি এমন দাবি করেছেন।
যেকোনো রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ‘পেশাদারিত্ব’ কোন বায়বীয় অদৃশ্য বস্তু নয়। ‘পেশাদারিত্ব’ পরিপূর্ণরূপে দৃশ্যমান বিষয়। যেকোনো সদস্যের চলনে, কথোপকথনে, অফিসের ভিতরে ও বাইরের প্রতিটি কাজে-আপরণে ‘পেশাদারিত্ব’ সাধারণ মানুষের চোখের সামনে স্পষ্টভাবে দেখা যাওয়ার মতো ব্যাপার!
পুলিশের পেশাদারিত্ব মাপার কিছু সহজ উপায় রয়েছে। যেমন ধরুন: দেশের কোন মানুষ বিপদে পড়া মাত্রই পুলিশের সাহায্য নেওয়ার জন্য উদগ্রীপ হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, আর্থিকভাবে বিত্তবান বা বিত্তহীন, উচ্চশিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত, রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম বা ক্ষমতাহীন নির্বিশেষে যেকোনো মানুষ নির্দিধায় ও নির্ভয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হতে একটুও পিছপা হবে না – যদি পুলিশ ‘পেশাদার’ হয়! পেশাদার পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনো বিশেষ প্রভাব-প্রতিপত্তি ছাড়াই প্রতিটি নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখার কথা এবং একই সাথে বৈষম্যহীন মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করার কথা।
পেশাদার পুলিশ ‘স্বচ্ছতার নীতি অবলম্বনকারী’ হওয়ার কথা। ‘স্বচ্ছতার নীতি’ অবলম্বনের বিষয়টা আমরা বুঝতে পারি তখন, যখন পুলিশের কথা ও কাজের মাঝে কোন অসামঞ্জস্য থাকে না। অর্থাৎ পুলিশ স্পষ্টভাবে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে, কাউকে সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া, ও (নিতান্ত ব্যতিক্রম ছাড়া) কাউকে পরোয়ানা ব্যতিত, গ্রেপ্তার করবে না। একই সাথে গ্রেপ্তারের পর কোনো অজুহাতে সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে আটককৃত ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে আটকে না রেখে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবে। বলাই বাহুল্য, পুলিশ আটককৃত ব্যক্তিকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বা কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানে বাধ্য করবে না।
পেশাদার পুলিশ মামলা গ্রহনের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না এবং মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য ও প্রকৃত প্রমাণাদির উপর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বারোপ করবে।
এখন আসুন আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করি! বাংলাদেশের পুলিশের কোনো থানায় বা ফাঁড়িতে বা কোনো কার্যালয়ে একজন নারী বা কোনো ক্ষমতাহীন মানুষ বিপদগ্রস্থ হয়ে কী আদৌ যেতে ইচ্ছুক? নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও তারা কি পুলিশের কাছে নিজেদেরকে ‘নিরাপদ’ বোধ করে? কোনো নারী কী বিপদে পড়েও একাকী পুলিশের কাছে যেতে স্বস্তি বোধ করে? চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও সরকারের মতের সাথে ভিন্নমতপোষনকারী কোনো মানুষ কী পুলিশের কাছে ন্যায্য প্রতিকার পাওয়ার কথা ঘুণাক্ষকরেও কল্পনা করতে পারে?
এইসব প্রশ্নের একটাই জবাব! ‘না’! কেন? পুলিশের নির্যাতন-প্রবণ ও নিবর্তনমূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই মানুষ পুলিশকে একটি আগ্রাসী-অবিবেচক যমদূত মনে করে! নিজের চরম শত্রুকে বিশ্বাস করলেও সে পুলিশকে বিশ্বাস করে না!
পুলিশী নির্যাতন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাতিষ্ঠানিকতা লাভ করেছে – এটা এক চরম অপ্রিয় সত্য। দেশের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা নির্যাতনের সর্বব্যপী ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করে চলেছে নির্বিচারে ‘রিমান্ড’ মঞ্জুর করা ও পুলিশের অপরাধ সমূহ চোখ বন্ধ করে না দেখার ভান করে নিজেদের চাকুরী রক্ষার ব্রত গ্রহনের মাধ্যমে। নির্যাতনের এই প্রাতিষ্ঠানিকতা বন্ধ করতে হলে বিচার ব্যবস্থার অনতিবিলম্বে আমূল সংস্কার দরকার।
See the Video Link Here